C.G.S পদ্ধতির পূর্ণরুপ হল সেন্টিমিটার গ্রাম সেকেন্ড পদ্ধতি (Centimetre Gram Second System )। ইহা মেট্রিক পদ্ধতির প্রথম অভিযোজন। এ পদ্ধতিতে-
M.K.S পদ্ধতির পূর্ণরুপ হল মিটার কিলোগ্রাম সেকেন্ড পদ্ধতি ( Metre Kilogram Second System )। এ পদ্ধতিতে --
উত্তর: F.P.S পদ্ধতির পূর্ণরুপ হল ফুট পাউণ্ড সেকেন্ড পদ্ধতি (Foot Pound Second System ) এ পদ্ধতিতে --
১৯৬০ সাল থেকে দুনিয়া জোড়া বিভিন্ন রাশির একই রকম একক চালু করার সিদ্ধান্ত হয় । এককের এই পদ্ধতিকে বলা হয় আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ( International Systems of Units) বা সংক্ষেপে এস, আই (S.I) ১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশের সর্বত্র দৈর্ঘ্য মাপার জন্য এবং ওজন নির্ণয়ের জন্য আন্তর্জাতিক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার ভােগ্যপণ্য ও অন্যান্য দ্রব্যের আকার, আকৃতি ও ধরনের ওপর এ পরিমাপ পদ্ধতি নির্ভর করে। দৈর্ঘ্য মাপার জন্য, ওজন পরিমাপ করার জন্য ও তরল পদার্থের আয়তন বের করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন পরিমাপ পদ্ধতি রয়েছে। ক্ষেত্রফল ও ঘনফল নির্ণয়ের জন্য দৈর্ঘ্য পরিমাপ দ্বারা তৈরি পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। আবার জনসংখ্যা, পশুপাখি, গাছপালা, নদীনালা, ঘরবাড়ি, যানবাহন ইত্যাদির সংখ্যাও আমাদের জানার প্রয়ােজন হয়। গণনা করে এগুলাে পরিমাপ করা হয়।
পরিমাপ ও এককের পূর্ণতার ধারণা
যেকোনাে গণনায় বা পরিমাপে একক প্রয়ােজন। গণনার জন্য একক হচ্ছে প্রথম স্বাভাবিক সংখ্যা ১। দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যকে ১ একক ধরা হয়। অনুরূপভাবে, ওজন পরিমাপের জন্য নির্দিষ্ট কোনাে ওজনকে একক ধরা হয়, যাকে ওজনের একক বলে । আবার তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপের এককও অনুরূপভাবে বের করা যায়। ক্ষেত্রফল পরিমাপের ক্ষেত্রে ১ একক দৈর্ঘ্যের বাহুবিশিষ্ট একটি বর্গাকার ক্ষেত্রকে একক ধরা হয়। একে ১ বর্গ একক বলে । জ্রপ ১ একক দৈর্ঘ্যের বাহুবিশিষ্ট একটি ঘনকের ঘনফলকে ১ ঘন একক বলে। সকলক্ষেত্রেই এককের মাধ্যমে গণনায় বা পরিমাপে সম্পূর্ণ পরিমাপের ধারণা লাভ করা যায় । কিন্তু পরিমাপের জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন একক রয়েছে।
মেট্রিক পদ্ধতিতে পরিমাপ
বিভিন্ন দেশে পরিমাপের জন্য বিভিন্ন পরিমাপ পদ্ধতি প্রচলিত থাকায় আন্তর্জাতিক ব্যবসাবাণিজ্যে ও আদানপ্রদানে অসুবিধা হয়। তাই ব্যবসাবাণিজ্যে ও আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে পরিমাপ করার জন্য আন্তর্জাতিক রীতি তথা মেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এ পরিমাপের বৈশিষ্ট্য হলাে এটা দশগুণােত্তর । দশমিক ভগ্নাংশের দ্বারা এ পদ্ধতিতে পরিমাপ সহজে প্রকাশ করা যায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সে প্রথম এ পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয় । বাংলাদেশে ১লা জুলাই, ১৯৮২ সাল থেকে এ মেট্রিক পদ্ধতি চালু করা হয়। এখন দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্রফল, ওজন ও তরল পদার্থের আয়তন প্রতিটি পরিমাপেই এ পদ্ধতি পুরােপুরি প্রচলিত রয়েছে ।
দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক মিটার। পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের দ্রাঘিমা রেখা বরাবর বিষুবরেখা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের কোটি ভাগের এক ভাগকে এক মিটার হিসেবে গণ্য করা হয় । পরবর্তীতে প্যারিস মিউজিয়ামে রক্ষিত এক খণ্ড ‘প্লাটিনামের রড’-এর দৈর্ঘ্য এক মিটার হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। এ দৈর্ঘ্যকেই একক হিসেবে ধরে রৈখিক পরিমাপ করা হয়। দৈর্ঘ্যের পরিমাপ ছােট হলে সেন্টিমিটারে এবং বড় হলে কিলােমিটারে প্রকাশ করা হয়। দৈর্ঘ্যের একক মিটার থেকে মেট্রিক পদ্ধতি নামকরণ করা হয়েছে।
ওজন পরিমাপের একক গ্রাম। এটি মেট্রিক পদ্ধতির একক। কম ওজনের বস্তুকে গ্রামে এবং বেশি ওজনের বস্তুকে কিলােগ্রাম (কে.জি.)-এ প্রকাশ করা হয়।
তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপের একক লিটার। এটি মেট্রিক পদ্ধতির একক। অল্প আয়তনের তরল পদার্থের পরিমাপে লিটার ও বেশি পরিমাপের জন্য কিলােলিটার ব্যবহার করা হয়।
মেট্রিক পদ্ধতিতে কোনাে দৈর্ঘ্যকে নিম্নতর থেকে উচ্চতর অথবা উচ্চতর থেকে নিম্নতর এককে পরিবর্তিত করতে হলে, অঙ্কগুলাে পাশাপাশি লিখে দশমিক বিন্দুটি প্রয়ােজনমতাে বামে বা ডানে সরাতে হবে।
যেমন- ৫ কি. মি. ৪ হে. মি. ৭ ডেকা.মি. ৬ মি. ৯ ডেসি.মি. ২ সে. মি. ৩ মি. মি.
= (৫০০০০০০ + ৪০০০০০ + ৭০০০০ + ৬০০০ + ৯০০ + ২০+৩) মি.মি.
= ৫৪৭৬৯২৩ মি. মি.
= ৫৪৭৬৯২.৩ সে. মি.
= ৫৪৭৬৯.২৩ ডেসি.মি.
= ৫৪৭৬.৯২৩ মি.
= ৫৪৭.৬৯২৩ ডেকা.মি.
= ৫৪.৭৬৯২৩ হে. মি.
= ৫.৪৭৬৯২৩ কি. মি. ।
আমরা জানি, কোনাে দশমিক সংখ্যার কোনাে অঙ্কের স্থানীয় মান এর অব্যবহিত ডান অঙ্কের স্থানীয় মানের দশ গুণ এবং এর অব্যবহিত বাম অঙ্কের স্থানীয় মানের দশ ভাগের এক ভাগ। মেট্রিক পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্য, ওজন বা আয়তন মাপার ক্রমিক এককগুলাের মধ্যেও এরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান আছে। সুতরাং, মেট্রিক পদ্ধতিতে নিরূপিত কোনাে দৈর্ঘ্য, ওজন বা আয়তনের মাপকে দশমিকের সাহায্যে সহজেই যেকোনাে এককে প্রকাশ করা যায়।
মেট্রিক ও ব্রিটিশ পরিমাপের সম্পর্ক সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তাই এ সম্পর্ক আসন্নমান হিসেবে কয়েক দশমিক স্থান পর্যন্ত মান নিয়ে প্রকাশ করা হয়। ছােট দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য স্কেল ব্যবহৃত হয়। বড় দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য ফিতা ব্যবহার করা হয়। ফিতা ৩০ মিটার বা ১০০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে।
প্রত্যেক বস্তুর ওজন আছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন এককের সাহায্যে বস্তু ওজন করা হয়।
ওজন পরিমাপের একক : গ্রাম ১ কিলােগ্রাম বা ১ কে.জি. = ১০০০ গ্রাম
মেট্রিক পদ্ধতিতে ওজন পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত আরও দুইটি একক আছে। অধিক পরিমাণ বস্তুর ওজন পরিমাপের জন্য কুইন্টাল ও মেট্রিক টন একক দুইটি ব্যবহার করা হয়।
১০০ কিলােগ্রাম = ১ কুইন্টাল
১০০০ কিলােগ্রাম= = ১ মেট্রিক টন
কোনাে তরল পদার্থ যতটুকু জায়গা জুড়ে থাকে তা এর আয়তন। একটি ঘনবস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা আছে। কিন্তু কোনাে তরল পদার্থের নির্দিষ্টভাবে তা নেই। যে পাত্রে তরল পদার্থ রাখা হয় তা সেই পাত্রের আকার ধারণ করে। এ জন্য নির্দিষ্ট আয়তনের কোনাে ঘনবস্তুর আকৃতির মাপনি দ্বারা তরল পদার্থ মাপা হয়। এক্ষেত্রে আমরা সাধারণত লিটার মাপনি ব্যবহার করি। এ মাপনিগুলাে ,১/৪, ১/২, ১, ২, ৩, ৪ ইত্যাদি লিটারবিশিষ্ট এলুমিনিয়াম বা টিনের শিট দ্বারা তৈরি এক প্রকারের কোনক আকৃতির পাত্র বা সিলিন্ডার আকৃতির মগ। আবার স্বচ্ছ কাচের তৈরি ২৫, ৫০, ১০০, ২০০, ৩০০, ৫০০, ১০০০ মিলিলিটার দাগকাটা খাড়া পাত্রও ব্যবহার করা হয়। সাধারণত দুধ ও তেল মাপার ক্ষেত্রে উল্লিখিত পাত্রগুলাে ব্যবহার করা হয়।
ক্রেতা-বিক্রেতার সুবিধার্থে বর্তমানে ভােজ্যতেল বােতলজাত করে বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ১, ২, ৫ ও ৮ লিটারের বােতল বেশি ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রকারের পানীয় সাধারণত ২৫০, ৫০০, ১০০০, ২০০০ মিলিলিটারে বােতলজাত করে বিক্রি করা হয়।
আয়তাকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের পরিমাপ = দৈর্ঘ্যের পরিমাপ X প্রস্থের পরিমাপ
বর্গাকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের পরিমাপ = (বাহুর পরিমাপ)^২
ত্রিভুজাকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের পরিমাপ = ১/২x ভূমির পরিমাপ x উচ্চতার পরিমাপ
ক্ষেত্রফল পরিমাপের একক : বর্গমিটার
ক্ষেত্রফল পরিমাপের মেট্রিক এককাবলি